সদর-বন্দরের ভরসার কেন্দ্রস্থল কালাম পরিবার
ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা অলিখিত ক্ষমতা লাভের পর অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলেন। কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন। কোন কোন নেতা নিজেরাই জড়িয়ে পড়েন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে। আওয়ামী লীগ আমলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এই ইস্যু টেনে এনে সেসবের বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু এসবের বাইরেও নিজেদের সুনাম এবং বিতর্কের জাল থেক দূরে সরিয়ে রেখেছে সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হাজী জালাল পরিবার। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শহর কিংবা বন্দরে ঘাট, হাট, বাজার, পরিবহন, গার্মেন্টস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করার কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি এই পরিবারের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে। এছাড়া চাঁদাবাজি, মারামারি, জবরদখল, সংঘাতেও জড়ায়নি এই পরিবারের সদস্যরা। অর্থাৎ অতীতের মতই নিজেদের আভিজাত্য এবং বিতর্কের বাইরে রাখাকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন পরিবারের প্রতিটা সদস্য। যথাসম্ভব ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
হাজী জালাল পরিবার হিসেবে বর্তমানে সক্রিয় বিএনপির রাজনীতিতে আছেন সাবেক এমপি ও সাবেক মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম, তার ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুল, আবুল কালামের ছেলে সাবেক কাউন্সিলর ও সাবেক মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আবুল কাউসার আশা এবং তার বোন নূর বাঁধন। একজন ব্যতীত বাকি সকলেই জনপ্রতিনিধি হবার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। রাজনৈতিক দলের নেতা হবার পাশাপাশি জনগণের নেতাও হয়েছেন ভোটের মাধ্যমে। কিন্তু তবুও অহমিকা গ্রাস করেনি তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বহু রাজনৈতিক নেতা এমপি, চেয়ারম্যান কিংবা কাউন্সিলর পদে জয় পাওয়ার পরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অপকর্ম করেন। জনপ্রতিনিধিত্ব চলে গেলেও তাদের সেই প্রভাব কমে না। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এই পরিবারটি। জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনৈতিক পদ পদবী থাকলেও বিতর্কে জড়ান না কোন সদস্য। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের কাছে যেমন শ্রদ্ধা পান, তেমনি কেন্দ্রীয় নেতারাও তাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করে রাখতে পারেন।
তবে মহানগর বিএনপির অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতার কারণে মাঝে বেশ কিছুদিন কাদা ছোড়াছুড়ি চলেছে মূল কমিটি ও বিদ্রোহীদের মাঝে। নানান অভিযোগ দিয়ে কালাম পরিবারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হলেও দিনশেষে মূল কমিটির উপরেই আস্থা হারাতে শুরু করেছে কর্মী থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা। গত ৫ আগস্টের পরে এই কালাম পরিবারের সদস্যদের নামে একের পর এক মামলা দায়ের করা হলেও টলেননি কেউই। উলটো কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে বাস্তবতা জানিয়ে দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের। ফলে আগের তুলনায় অনেক বেশি মূল্যায়ন পাচ্ছে কালাম পরিবার।
অনুসারীরা বলছেন, একদিকে বিএনপির কিছু নেতা সারাদিন প্রশাসনের কাছে গিয়ে নানান তদবিরে ব্যস্ত। তার সাথে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের পাহাড়। গোয়েন্দা সংস্থাও লিপিবদ্ধ করছে এসব অভিযোগ। বিপরীতে কালাম পরিবার নিয়ে এই ধরনের কোন অভিযোগের বালাই নেই। তারা কেউ দুদিন পর পর তদবির নিয়ে বিব্রত করেন না প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। ফলে স্পষ্টভাবেই ভালো মন্দের পার্থক্য পরিষ্কার হয়ে যায় সকলের মাঝে। একদিকে মামলায় আসামী হওয়া কিংবা পদ পদবী না থাকার পরেও নির্ভার কালাম পরিবার। অন্যদিকে পদপদবী ও বাণিজ্যে ব্যস্ত থেকে দুশ্চিন্তায় কালাম বিরোধীরা।