নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের দরপত্র (টেন্ডার) নিয়ে লুকোচুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দরপত্র খোলার ২৪ দিন পার হলেও অংশ নেয়া ঠিকাদারদেররা বিস্তারিত তথ্য জানেন না বলে দাবি করেছেন। দরপত্র খোলা হলেও কোন প্রতিষ্ঠান কত দর দিয়েছে এবং সর্বনিম্ন দরপত্র দেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে প্রকাশ্যে জানানো হয়নি৷ হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে এমন লুকোচুরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দরপত্রে অংশ নেওয়া একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন৷
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ নভেম্বর ওটিএম (ওপেন টেন্ডার মেথোড) প্রক্রিয়ায় ৬টি কাজের টেন্ডার আহবান করে ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়। কাজের মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের সকল প্রকার ঔষধ, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ও মেশিনপত্র, গজ ব্যান্ডেজ তুলা, পরীক্ষা নিরীক্ষা (ক্যামিকেল রিয়েজেন্ট), এসএমআর আসবাবপত্র সরবরাহ, মেরামত ও রং করণ, এমএমআর লিনেন সামগ্রী সরবরাহ। দরপত্র জমার শেষ ও খোলার তারিখ ছিল গত ২৩ ডিসেম্বর। ৬টি কাজে মোট ৪৯টি দরপত্র জমা পড়ে বলে তখন জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
দরপত্রের শিডিউল কেনায় বাধা, জমা না দিতে ভয়ভীতি প্রদর্শন, একইভাবে জমা দেয়া নিয়েও হট্টোগোলের ঘটনা ঘটেছে এই কাজে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্যার্জিকাল কোম্পানির মালিক জানান, সিডিউল কেনা এবং জমা দিতে বাধা দেয়া হয়। গত ২৩ ডিসেম্বর দরপত্র জমা দিতে গেলে তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়। ধাক্কাধাক্কি হয় এমনকি প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করা যায়। এতে ভয় পেয়ে অনেকে দরপত্র জমা না দিয়েই ফেরত আসে।
একজন ঠিকাদার জানান, নিয়ম অনুযায়ী, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সকল অংশগ্রহণকারীর সামনে প্রত্যেক দরপত্র খুলবেন এবং সকলকে জানাবেন কোন প্রতিষ্ঠান কত টাকা দর ফেলেছে। সে অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান টেন্ডার পাবেন। পরবর্তীতে কোন প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে শর্তাবলির প্রমাণে ব্যর্থ হলে তাদের দরপত্র বাতিল করা হয়৷ অভিযোগ রয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক তা করেননি। ওই ঘটনার ২৪ দিন অতিবাহিত হলেও দরপত্র ফেলা প্রতিষ্ঠানগুলো জানেন না কে কত টাকা দরপত্রে দিয়েছে কিংবা টেন্ডারটি কোন প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে দরপত্র নিয়ে টালবাহানা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোন প্রতিষ্ঠান কত দর দিয়েছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ না করে দীর্ঘদিন ফেলে রেখে নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে টেন্ডার দেয়ার প্রচেষ্টা করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাসার বলেন, এমন কিছুই হচ্ছে না।
অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, এবার ৪৯ শিডিউলে বিক্রি হয়েছে। এতগুলোর মধ্যে কেউ কেউ জমা দিতে না পারলে আমাদের কিছু করারা নেই। জমা দেয়ার দিন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিল।
ডা. বাসার জনসম্মুখে দরপত্র খোলার বিষয়ে তিনি বলেন, সব দরপত্র জনসম্মুখে খোলা হয় না। জনসম্মুখে জমা নিলেও মূল্যায়ন সবার সামনে হয় না। মূল্যায়নে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনসহ অনেকেই থাকে। আমরা দরপত্রগুলো মূল্যায়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় এপ্রুভ করলে আমরা ফলাফল ঘোষণা করবো।